সংক্ষেপে রুদ্রাক্ষ মালা শোধন পদ্ধতি
রুদ্রাক্ষ মালা শোধন Rudraksha. Mala Purify. Trilochana

বিভিন্ন পদ্ধতিতে রুদ্রাক্ষ মালা শোধন করা হয়ে থাকে। ধারণের জন্য রুদ্রাক্ষ মালার শোধন এক রকম পদ্ধতি। আবার জপের জন্য রুদ্রাক্ষ মালার শোধন অন্য রকম পদ্ধতি। আর তন্ত্রাচারে রুদ্রাক্ষ মালা শোধন করতে গেলে নানান উপকরণ যেমন – দুধ, দই, শর্করা, মধু, গরুর গোবার, গরুর মূত্র ইত্যাদি প্রয়োজন হয়। কোন উপকরণ সংগ্রহ করতে না পারলে তার পরিবর্তে জল ব্যবহার করার বিধান শাস্ত্রে আছে।

কিন্তু এই পদ্ধতি একদম ভিন্ন। বিশেষ করে যারা শহরে বা দেশের বাহিরে বা ব্যাচেলর থাকেন, এককথায় উপকরণ সংগ্রহ করা কঠিন, তাদের জন্য ত্রিলোচন থেকে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে রুদ্রাক্ষ মালা শোধন পদ্ধতি তৈরি করা হয়েছে। শুধুমাত্র জল দিয়ে রুদ্রাক্ষ মালা শোধন করে নেওয়া সম্ভব।

সতর্কতাঃ এই পদ্ধতিতে আপনি রুদ্রাক্ষ মালা ধারণ এবং জপ উভয় কাজের জন্য শোধন করতে পারবেন। কিন্তু কখনই জপের মালাকে ধারণ করবেন না এবং ধারণের মালাতে জপ করবেন না। দুটি মালার কাজ সম্পূর্ণ ভিন্ন। জপের মালা সব সময় গোমুখী ব্যাগ দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়।

সদাশিবের পাঁচটি মুখ রয়েছে। আর এই পাঁচটি মুখের মন্ত্রে অর্থাৎ পঞ্চব্রহ্ম মন্ত্র দিয়ে শোধন করবেন। নিচে শোধন পদ্ধতি দেওয়া হল। সম্পূর্ণ শোধন পদ্ধতিতে যেসকল মন্ত্রে “ওঁ” রয়েছে সেটি ব্রাহ্মণরা উচ্চারণ করবেন। নারী এবং অব্রহ্মণরা “ওঁ” এর পরিবর্তে “নমঃ” উচ্চারণ করবেন।

ধারণের জন্য রুদ্রাক্ষ মালা ক্রয় করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।

জপের জন্য রুদ্রাক্ষ মালা ক্রয় করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।

গোমুখী ব্যাগ ক্রয় করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।

======================== X ========================

প্রয়োজনীয় উপকরণঃ

  • আতপ চাল, কুশ, তিল, হরিতকি, অগুরু, জল, ফুল।
  • রুদ্রাক্ষ মালা ও মালা রাখার পাত্র।
  • যারা জপের জন্য শোধন করবেন তাদের জন্য গোমুখী ব্যাগ।

সবার প্রথমে নিম্নলিখিত মন্ত্রটি পাঠ করে ভগবান শিবকে স্মরণ করুন – 

যো ধত্তে ভুবনানি সপ্ত গুণবান স্রষ্টা রজঃসংশ্রয়ঃ 
সংহর্তা তমসান্বিতো গুণবতীং মায়াবতীত্য স্থিতঃ। 
সত্যানন্দমনন্তবোধমমলং ব্রহ্মাদিসংজ্ঞাষ্পদং 
নিত্যং সত্ত্বসমম্বয়াদধিগতং পূর্ণংশিবং ধীমহি।। 

শৈব আচমন বিধিঃ

ডান হাতকে গরুর কানের মত ভাঁজ করুন। ডান হাতের করতলে একফোঁটা পরিস্কার জল নিন। জলটি যেন পোকামাকড়, কৃমি, ফ্যানা, বুদবুদ এই জাতীয় পদার্থ মুক্ত হয় এবং আপনি চাইলে আচমনী পাত্র ব্যবহার করতে পারেন। সেই জলকে ডান হাতের ব্রহ্মতীর্থে মুখ লাগিয়ে চুমুক দিয়ে পান করুন। পান করার সময় মনে মনে পাঠ করুন-

ওঁ আত্মতত্ত্বায় স্বধা ।।

একইভাবে দ্বিতীয় বার জল নিয়ে পান করুন, এবার পাঠ করুন –

ওঁ বিদ্যাতত্ত্বায় স্বধা ।।

একইভাবে তৃতীয় বার জল নিয়ে পান করুন, এবার পাঠ করুন –

ওঁ শিবতত্ত্বায় স্বধা ।।

এবার কবচ মন্ত্র “ওঁ কবচায় হূঁ” পাঠ করে ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুলের তল দিয়ে দুইবার ঠোঁট পরিষ্কার করুন। এবার ডান হাতের বৃদ্ধ এবং অনামিকা আঙ্গুলকে একসাথে যুক্ত করে যথাক্রমে চোখ, নাক, কান, বাহু, বুক, নাভি এবং মাথা স্পর্শ করুন। এরপর ডান হাত দিয়ে ডান চোখ ও বাম চোখ স্পর্শ করে হৃদায় মন্ত্র “ওঁ হৃদয়ায় নমঃ” পাঠ করুন।

বিষ্ণু স্মরণঃ

হাত জোড় করে নিচের মন্ত্র পাঠ করুন –

ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সুরয়ঃ ।
দিবীব চক্ষুরাততম্ ।।
ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ।।
উং সর্বমঙ্গল মঙ্গল্যং বরেণ্যং বরদং শুভম্ ।
নারায়ণং নমস্কৃত্য সর্বকর্মাণি কারয়েৎ ।।

এবার ৩ বার মাথায় জল ছিটাবেন এবং প্রতিবার জল ছিটানোর সময় বলবেন- “ওঁ বিষ্ণু” ।

দেহ শুদ্ধিঃ

হাত জোড় করে নিচের মন্ত্র পাঠ করুন –

ওঁ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাস্থাং গতোঽপি বা।
যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ ।।

সংকল্পঃ

তামার পাত্রে (কুশি) আতপ চাল, কুশ, তিল, হরিতকি, অগুরু, জল, ফুল নিয়ে তা বামহাতে রেখে ডানহাত দিয়ে চাপ দিয়ে উত্তরদিকে মুখ করে বসে নিচের মন্ত্র পাঠ করুন –

ওঁ বিষ্ণুরোম্ তৎসদদ্য …….. মাসি …….. রাশিস্থে ভাস্করে …….. পক্ষে …….. তিথৌ …….. গোত্রঃ শ্রী …….. দেবশর্ম্মা/দেবী রুদ্রাক্ষ শোধনম্ এব পূজা করিষ্যে/করিষ্যামি ।।

বিঃদ্রঃ- নিজের জন্য শোধন করলে “করিষ্যে” এবং অন্যের জন্য শোধন করলে “করিষ্যামি“।

সংকল্পসূক্তঃ

পাত্রের জল ঈশান কোণে ফেলে দিয়ে বাক্যপাত্রটি উপুর করে রেখে ব্রাহ্মণরা স্ব স্ব বেদ অনুসারে হাত জোড় করে নিচের মন্ত্রটি পাঠ করুন –

সামবেদী –

ওঁ দেবো বো দ্রবিণোদা পূর্ণাং বিবষ্ট্বাসিম্ ।
উদ্ বা সিঞ্চ ধ্বমুপ বা পৃণধ্বমাদিদ্ বো দেব ওহতে ।।

যজুর্বেদী –

ওঁ যজ্জাগ্রোতো দূরমুদৈতি দৈবং তদু সুপ্তস্য তথৈবৈতি ।
দূরঙ্গ মং জ্যোতিষাং জ্যোতিরেকং তন্মে মনঃ শিব সংকল্পমস্তু ।।

ঋগ্বেদী –

ওঁ যা গুঁগূর্যা সিনীবালী যা রাকা যা সরস্বতী ।
ইন্দ্রাণীমহ্ব উতয়ে বরুণানীং চ স্বস্তয়ে ।।

সংকল্পসূক্ত পাঠ হয়ে গেলে হাত জোড় করে নিচের মন্ত্র পাঠ করুন –

ওঁ সঙ্কল্পিতার্থাঃ সিদ্ধন্তু সিদ্ধাঃ সন্তু মনোরথাঃ ।
শত্রুণাং বুদ্ধিনাশায় মিত্রানামুদয়ায় চ ।।

এবার একটি পাত্রে রুদ্রাক্ষ মালা রেখে সেখানে জল ঢালতে ঢালতে নিচের পঞ্চব্রহ্ম মন্ত্র পাঠ করুন।

সদ্যোজাত (সাক্ষাৎ ব্রহ্মা স্বরূপ) –

ওঁ সদ্যোজাতং প্রপদ্যামি সদ্যোজাতায় বৈ নমো নমঃ
ভবে ভবেনাতি ভবে ভবস্ব মাং ভবোদ্ভবায় নমঃ ।।

বামদেব (সাক্ষাৎ শ্রীবিষ্ণু স্বরূপ) –

ওঁ বামদেবায় নমো জ্যেষ্ঠায় নমঃ শ্রেষ্ঠায় নমো রুদ্রায় নমঃ
কালায় নমঃ কলবিকরণায় নমো বলবিকরণায় নমো বলায় নমো
বলপ্রমথনায় নমঃ সর্বভূত দমনায় নমো মনোন্মনায় নমঃ ।।

অঘোর (সাক্ষাৎ রুদ্র স্বরূপ) –

ওঁ অঘোরেভ্যো অথ ঘোরেভ্যো ঘোরঘোরতরেভ্যঃ সর্বেভ্যঃ
সর্বশর্বেভ্যো নমস্তে অস্তু রুদ্ররূপেভ্যঃ ।।

তৎপুরুষ (সাক্ষাৎ ঈশ্বর/মহেশ্বর স্বরূপ) –

ওঁ তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমহি
তন্নো রুদ্রঃ প্রচোদয়াৎ ।।

ঈশান (সাক্ষাৎ সদাশিব/মনোন্মন স্বরূপ) –

ওঁ ঈশানঃ সর্ববিদ্যানাং ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং
ব্রহ্মাধিপতির্ব্রহ্মণোঽধিপতির্ব্রহ্মা শিবো মে অস্তু সদাশিবোম্ ।।

আপনি যদি ধারণের জন্য রুদ্রাক্ষ মালা শোধন করে থাকেন তাহলে মালাটি শিবলিঙ্গ অথবা শিবের ছবিতে ছুয়ে ধারণ করে নিন। আর যদি আপনি জপের জন্য রুদ্রাক্ষ মালা শোধন করে থাকেন তাহলে নিচের কাজগুলো সম্পূর্ণ করুন।

এবার এই রুদ্রাক্ষ মালাতে ১০৮ x ২ = ২১৬ বার একাক্ষর “হৌং” অথবা ব্রাহ্মণরা ষড়াক্ষর মহামন্ত্র “ওঁ নমঃ শিবায়”, অব্রাহ্মণরা পঞ্চাক্ষর মহামন্ত্র “নমঃ শিবায়” জপ করে মালাটিকে শিব মন্ত্রে অভিষিক্ত করুন।

এবার মালাটিকে একটি কাপড়ে জড়িয়ে অথবা গোমুখী থলের (জপের ব্যাগ) ভিতর ঢুকিয়ে নিচের মন্ত্রটি পাঠ করে তুলে রাখুন।

ওঁ ত্বং মালে সর্ব্বদেবানাং সর্ব্বসিদ্ধি প্রদামতা ।
তেন সত্যেন মে সিদ্ধিং দেহি মাতর্নমোস্ততে ।।

রুদ্রাক্ষ মালা শোধন সমাপ্ত হল।

নির্দেশনা ও সতর্কতাঃ

  • নিত্য জপ করার জন্য বাজারের সহজলভ্য কম দামী পাঁচমুখী রুদ্রাক্ষ মালা ব্যবহার করতে পারেন।
  • রুদ্রাক্ষ জপ মালা এবং রুদ্রাক্ষ ধারণের মালা দুটি এক নয়। তন্ত্রাচারে দুটির শোধন পদ্ধতি আলাদা। যদিও আমরা এখানে সহজলভ্য এবং সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করেছি যারা পরিবেশের প্রতিকুলে রয়েছেন, শুধুমাত্র তাদের জন্য এই পদ্ধতি।
  • রুদ্রাক্ষ জপের মালা শোধন করা হয়ে গেলে আপনি নিজে ব্যতিত অন্য কেউ দেখতে পারবে না। তাই জপের মালা সবসময় একটি গোমুখী ব্যাগের ভিতর রেখে নিত্য জপ করবেন।
  • রুদ্রাক্ষ জপের মালা কখনই ধারণ করবেন না এবং ধারণের মালাতে কখনই জপ করবেন না।
  • রুদ্রাক্ষ জপমালায় প্রতিটি রুদ্রাক্ষ আসল, নিখুঁত ও সম আকৃতির হওয়া আবশ্যক।
  • রুদ্রাক্ষ জপের মালায় বিভিন্ন রত্ন, লকেট, তাবিজ ইত্যাদি যোগ করা নিষিদ্ধ।
  • ধারণের মালায় ১০৮ টি অথবা ১০৯ টি বীজ থাকতে পারে। কিন্তু জপের মালায় ১০৯ টি বীজ থাকতে হবে। কারণ রুদ্রাক্ষ জপের মালার প্রথম বীজটিকে স্বাক্ষী ধরে নিয়ে জপ করতে হয় এবং উক্ত বীজ বাদ দিয়ে জপ করতে হয়।
  • ১০৮ বার জপ হয়ে গেলে মালাটিকে ঘুড়িয়ে পিছনের দিকে অর্থাৎ ইংরেজিতে ইউ আকৃতিতে (U) জপ করতে হবে। চক্রাকারে জপ করা নিষেধ।
  • একবার শিবমন্ত্রে রুদ্রাক্ষ জপমালাটি অভিষিক্ত হয়ে গেলে ওই মালাতে শিবমন্ত্র ব্যতিত অন্যকোন মন্ত্র জপ করবেন না। কারণ মালাটি শুধুমাত্র শিবমন্ত্র জপের জন্য কার্যকরী হয়েছে। আপনি এই মালাতে শিবের যেকোন তান্ত্রিক মন্ত্র, বৈদিক মন্ত্র ও শাবর মন্ত্র জপ করতে পারেন।
  • জপ করার সময় মালাকে বাম হাত দিয়ে স্পর্শ করা যাবে না এবং বাম হাতে দিয়েও জপ করা যাবে না। জপ করবেন ডান হাতে।
  • এমনভাবে জপ করতে হবে যেন রুদ্রাক্ষের গায়ে আঙ্গুলের নখ না লাগে। একই সাথে মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলির শেষ ভাগ দিয়ে রুদ্রাক্ষ স্পর্শ করা যাবে না।
  • জপের সময় পূর্ব বা উত্তর দিকে মুখ করে বসে মেরুদন্ডকে সোজা করে মালাকে হৃদয়ের সমসারিতে রেখে জপ করতে হবে।
  • জপের সময় মাথা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা উত্তম।
  • জপের সময় মন্ত্র বা নাম ব্যতিত অন্য কিছু চিন্তা করা যাবে না।
  • শৌচাগারে জপমালা নিয়ে প্রবেশ করবেন না।
  • প্রতি এক বছর পর পর একবার রুদ্রাক্ষ জপের মালা এবং ধারণের মালা সংস্কার করে নিবেন। এতে শক্তি জাগ্রত থাকে।
  • রুদ্রাক্ষ মালাতে রক্ত, মাংস, বীর্য ইত্যাদি লেগে গেলে পুনঃরায় সংস্কার করে নিতে হবে।
  • মালা নোংরা জায়গায় পড়ে গেলে, মালা সাথে রেখে সহবাসে লিপ্ত হলে, মালা সাথে রেখে বীর্যক্ষয় করলে পুনঃরায় সংস্কার করে নিতে হবে।
0