এই বিধিমতে বীজমন্ত্রগুলো দিয়ে আপনি ১ থেকে ১৪ মুখী পর্যন্ত রুদ্রাক্ষ বীজ শোধন করতে পারবেন। স্নান করে ধুতি পরিধান করে রুদ্রাক্ষ বীজ শোধন করবেন। শোধন করা ত্রিপুণ্ড্র থাকলে সেটি ধারণ করবেন। সম্পূর্ণ শোধন পদ্ধতিতে যেসকল মন্ত্রে “ওঁ” রয়েছে সেটি ব্রাহ্মণরা উচ্চারণ করবেন। নারী এবং অব্রহ্মণরা “নমঃ” উচ্চারণ করবেন।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- আতপ চাল, কুশ, তিল, হরিতকি, অগুরু, জল, ফুল।
- পঞ্চগব্য তথা দই, দুধ, ঘি, গোবর ও গোমুত্রের মিশ্রণ।
- পঞ্চামৃত তথা দই, দুধ, ঘি, মধু ও চিনির মিশ্রণ।
সবার প্রথমে নিম্নলিখিত মন্ত্রটি পাঠ করে ভগবান শিবকে স্মরণ করুন –
যো ধত্তে ভুবনানি সপ্ত গুণবান স্রষ্টা রজঃসংশ্রয়ঃ
সংহর্তা তমসান্বিতো গুণবতীং মায়াবতীত্য স্থিতঃ।
সত্যানন্দমনন্তবোধমমলং ব্রহ্মাদিসংজ্ঞাষ্পদং
নিত্যং সত্ত্বসমম্বয়াদধিগতং পূর্ণংশিবং ধীমহি।।
শৈব আচমন বিধিঃ
ডান হাতকে গরুর কানের মত ভাঁজ করুন। ডান হাতের করতলে একফোঁটা পরিস্কার জল নিন। জলটি যেন পোকামাকড়, কৃমি, ফ্যানা, বুদবুদ এই জাতীয় পদার্থ মুক্ত হয় এবং আপনি চাইলে আচমনী পাত্র ব্যবহার করতে পারেন। সেই জলকে ডান হাতের ব্রহ্মতীর্থে মুখ লাগিয়ে চুমুক দিয়ে পান করুন। পান করার সময় মনে মনে পাঠ করুন-
ওঁ (নমঃ) আত্মতত্ত্বায় স্বধা ।।
একইভাবে দ্বিতীয় বার জল নিয়ে পান করুন, এবার পাঠ করুন –
ওঁ (নমঃ) বিদ্যাতত্ত্বায় স্বধা ।।
একইভাবে তৃতীয় বার জল নিয়ে পান করুন, এবার পাঠ করুন –
ওঁ (নমঃ) শিবতত্ত্বায় স্বধা ।।
এবার কবচ মন্ত্র “ওঁ কবচায় হূঁ” পাঠ করে ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুলের তল দিয়ে দুইবার ঠোঁট পরিষ্কার করুন। এবার ডান হাতের বৃদ্ধ এবং অনামিকা আঙ্গুলকে একসাথে যুক্ত করে যথাক্রমে চোখ, নাক, কান, বাহু, বুক, নাভি এবং মাথা স্পর্শ করুন। এরপর ডান হাত দিয়ে ডান চোখ ও বাম চোখ স্পর্শ করে হৃদায় মন্ত্র “ওঁ হৃদয়ায় নমঃ” পাঠ করুন।
বিষ্ণু স্মরণঃ
হাত জোড় করে নিচের মন্ত্র পাঠ করুন –
ওঁ (নমঃ) তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সুরয়ঃ ।
দিবীব চক্ষুরাততম্ ।।
ওঁ (নমঃ) বিষ্ণু ওঁ (নমঃ) বিষ্ণু ওঁ (নমঃ) বিষ্ণু ।।
উং সর্বমঙ্গল মঙ্গল্যং বরেণ্যং বরদং শুভম্ ।
নারায়ণং নমস্কৃত্য সর্বকর্মাণি কারয়েৎ ।।
দেহ শুদ্ধিঃ
হাত জোড় করে নিচের মন্ত্র পাঠ করুন –
ওঁ (নমঃ) অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাস্থাং গতোঽপি বা।
যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ ।।
সংকল্পঃ
তামার পাত্রে (কুশি) আতপ চাল, কুশ, তিল, হরিতকি, অগুরু, জল, ফুল নিয়ে তা বামহাতে রেখে ডানহাত দিয়ে চাপ দিয়ে উত্তরদিকে মুখ করে বসে নিচের মন্ত্র পাঠ করুন –
ওঁ (নমঃ) বিষ্ণুরোম্ তৎসদদ্য …….. মাসি …….. রাশিস্থে ভাস্করে …….. পক্ষে …….. তিথৌ …….. গোত্রঃ শ্রী …….. দেবশর্ম্মা/দেবী রুদ্রাক্ষ শোধনম্ এব পূজা করিষ্যে/করিষ্যামি ।।
বিঃদ্রঃ- নিজের জন্য শোধন করলে “করিষ্যে” এবং অন্যের জন্য শোধন করলে “করিষ্যামি“।
সংকল্পসূক্তঃ
পাত্রের জল ঈশান কোণে ফেলে দিয়ে বাক্যপাত্রটি উপুর করে রেখে ব্রাহ্মণরা স্ব স্ব বেদ অনুসারে হাত জোড় করে নিচের মন্ত্রটি পাঠ করুন –
সামবেদী –
ওঁ দেবো বো দ্রবিণোদা পূর্ণাং বিবষ্ট্বাসিম্ ।
উদ্ বা সিঞ্চ ধ্বমুপ বা পৃণধ্বমাদিদ্ বো দেব ওহতে ।।
যজুর্বেদী –
ওঁ যজ্জাগ্রোতো দূরমুদৈতি দৈবং তদু সুপ্তস্য তথৈবৈতি ।
দূরঙ্গ মং জ্যোতিষাং জ্যোতিরেকং তন্মে মনঃ শিব সংকল্পমস্তু ।।
ঋগ্বেদী –
ওঁ যা গুঁগূর্যা সিনীবালী যা রাকা যা সরস্বতী ।
ইন্দ্রাণীমহ্ব উতয়ে বরুণানীং চ স্বস্তয়ে ।।
সংকল্পসূক্ত পাঠ হয়ে গেলে হাত জোড় করে নিচের মন্ত্র পাঠ করুন –
ওঁ সঙ্কল্পিতার্থাঃ সিদ্ধন্তু সিদ্ধাঃ সন্তু মনোরথাঃ ।
শত্রুণাং বুদ্ধিনাশায় মিত্রানামুদয়ায় চ ।।
এরপর “ওঁ নমঃ শিবায়” মন্ত্র পাঠ করতে করতে রুদ্রাক্ষটিকে প্রথমে পঞ্চগব্য (তথা – দুধ, দই, ঘি, গোবর ও গোমুত্রের মিশ্রণ) ও পরে পঞ্চামৃত (তথা – দুধ, দই, ঘি, মধু ও চিনির মিশ্রণ) দ্বারা ধৌত করুন।
এবার রুদ্রাক্ষটিকে ডান হাতের করতলে রেখে, নিম্নলিখিত মন্ত্রটি দশবার পাঠ করে রুদ্রাক্ষের শক্তি জাগরণ করুন –
ওঁ ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্ ।
উর্বারুকমিব বন্ধনান মৃত্যোর মুক্ষীয় মামৃতাৎ ।।
ওঁ হৌঁ অঘোরে হৌং ঘোরে হূং ঘোরতরে ওঁ হ্রৈং হ্রীং শ্রীং ঐং সর্ব্বতঃ সর্ব্বসর্ব্বেভ্যো নমস্তে রূদ্ররূপিণে হূং হূং ।।
এরপর ধারণ মন্ত্রটি পাঠ করতে করতে সেই রুদ্রাক্ষটিকে অঙ্গে ধারণ করুন।
রুদ্রাক্ষ | ধারণ মন্ত্র | রুদ্রাক্ষ | ধারণ মন্ত্র | ||
এক মুখী | : | ওঁ ঐং | আট মুখী | : | ওঁ রুং রং |
দুই মুখী | : | ওঁ শ্রীঁ | নয় মুখী | : | ওঁ হ্রাং |
তিন মুখী | : | ওঁ ধ্রুং ধ্রুং | দশ মুখী | : | ওঁ হ্রীঁ |
চার মুখী | : | ওঁ হ্রীং হ্রঃ | এগারো মুখী | : | ঔ শ্রীং |
পাঁচ মুখী | : | ওঁ হ্রীং | বারো মুখী | : | ওঁ হাং হ্রাং |
ছয় মুখী | : | ওঁ ঐং হ্রীঃ ওঁ | তের মুখী | : | ওঁ ক্ষ্রৌং নমঃ |
সাত মুখী | : | হ্রাং | চৌদ্দ মুখী | : | ওঁ উমাং |
উপরের মন্ত্রগুলো শুধুমাত্র প্রথমবার (শোধনের দিন) ধারণের সময় উচ্চারণ করতে হবে। এরপর থেকে ধারণ করার সময় ব্রাহ্মণরা ষড়াক্ষর মন্ত্র “ওঁ নমঃ শিবায়” এবং নারী, অব্রাহ্মণরা পঞ্চাক্ষর মন্ত্র “নমঃ শিবায়” মন্ত্র উচ্চারণ করে রুদ্রাক্ষ বীজগুলোকে ধারণ করবেন। ধারণ করার পর প্রতিদিন ঐ রুদ্রাক্ষকে স্পর্শ করে যারা দীক্ষিত তারাই উক্ত রুদ্রাক্ষের নিচের দেওয়া বীজ মন্ত্র কমপক্ষে ১১ বার অথবা ১০৮ বার পাঠ করবেন। যারা অদীক্ষিত তারা রুদ্রাক্ষের বীজ মন্ত্রের পরিবর্তে “নমঃ শিবায়” পঞ্চাক্ষরী মহামন্ত্র জপ করবেন। তবেই রুদ্রাক্ষ ফলাফল দিবে।
রুদ্রাক্ষ | বীজ মন্ত্র | রুদ্রাক্ষ | বীজ মন্ত্র | ||
এক মুখী | : | ওঁ হ্রীং নমঃ | আট মুখী | : | ওঁ হুং নমঃ |
দুই মুখী | : | ওঁ নমঃ | নয় মুখী | : | ওঁ হ্রীং হুং নমঃ |
তিন মুখী | : | ওঁ ক্লীং নমঃ | দশ মুখী | : | ওঁ হ্রীং নমঃ নমঃ |
চার মুখী | : | ওঁ হ্রীং নমঃ | এগারো মুখী | : | ওঁ হ্রীং হুং নমঃ |
পাঁচ মুখী | : | ওঁ হ্রীং নমঃ | বারো মুখী | : | ওঁ ক্রোং ক্ষৌং রৌং নমঃ |
ছয় মুখী | : | ওঁ হ্রীং হুং নমঃ | তের মুখী | : | ওঁ হ্রীং নমঃ |
সাত মুখী | : | ওঁ হুং নমঃ | চৌদ্দ মুখী | : | ওঁ নমঃ |
যদি গণেশ রুদ্রাক্ষ বা হর-গৌরী রুদ্রাক্ষ বা ১৫ থেকে ২১ মুখী পর্যন্ত রুদ্রাক্ষ হয় তবে বীজমন্ত্র হিসেবে ব্রাহ্মণরা ষড়াক্ষর মন্ত্র “ওঁ নমঃ শিবায়” এবং নারী, অব্রাহ্মণদের জন্য পঞ্চাক্ষর মন্ত্র “নমঃ শিবায়” অথবা মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করা যেতে পারে।
রুদ্রাক্ষ ধারণের শর্তাবলীঃ
- অঙ্গে ধারণ করলে নিত্য শিবপূজা করতে হবে এবং দীক্ষিত হলে নিত্য উক্ত রুদ্রাক্ষের বীজ মন্ত্র কমপক্ষে ১১ বার অথবা ১০৮ বার জপ করতে হবে। অদীক্ষিত হলে “নমঃ শিবায়” পঞ্চাক্ষরী মহামন্ত্র জপ করতে হবে। তবেই সেই রুদ্রাক্ষের ফলাফলগুলি সম্পূর্ণরূপে আপনি লাভ করতে পারবেন।
- প্রতিবছরে একবার রুদ্রাক্ষটিকে শোধন করে নিতে হবে।
- রুদ্রাক্ষে কোন অশৌচ অথবা অশুচি জনিত দোষ লাগে না, তাই নিশ্চিন্তে আপনি এটিকে ধারণ করতে পারেন।
- সঠিক ফল লাভের জন্য কেবলমাত্র আসল ও নিখুঁত রুদ্রাক্ষই ব্যবহার করবেন।
- যদি রুদ্রাক্ষটির কোনো স্থানে ফেটে যায়, ভেঙে যায় অথবা ফুটো হয়ে যায়, তবে সেই রুদ্রাক্ষটিকে জলে বিসর্জন দেবেন।
নোটঃ রুদ্রাক্ষ বীজ শোধন প্রক্রিয়াটি অনুমতি সাপেক্ষে সমীর কুমার মণ্ডল দাদার নিকট হতে সংগ্রহ করা হয়েছে।